প্রিয় নবীজির প্রিয় স্ত্রী খাদিজা (রা.), যিনি আমৃত্যু নবীজির সহযোদ্ধা ছিলেন, ভালো বন্ধু ছিলেন, বিপদে সাহসদাতা ছিলেন। তিনি নবীজির কাজে অনুপ্রেরণা দিতেন। তাঁর জীবদ্দশায় নবীজি (সা.) কাউকে বিয়ে করেননি। তিনি ইন্তেকাল করার পরও নবীজি তাঁকে স্মরণ করতেন।
তাঁর আত্মীয়-স্বজনকে ভালোবাসতেন। এমনকি তাঁর বান্ধবীদের জন্যও উপঢৌকন পাঠাতেন। তাঁর প্রশংসায় নবীজি আনন্দবোধ করতেন। নবীজি (সা.) তাঁর এই দুর্দিনের সঙ্গিনীকে ভীষণ ভালোবাসতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি খাদিজা ছাড়া নবীজির সহধর্মিণীদের আর কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত হইনি, অথচ আমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটেনি। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন বকরি জবাই করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদিজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদা আমি তাঁকে রাগিয়ে দিলাম এবং বললাম, খাদিজাকে এতই ভালোবাসেন? রাসুল (সা.) তখন বললেন, ‘তাঁর ভালোবাসা আমাকে রিজিক হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬১৭২)
তিনি স্ত্রী হিসেবে নবীজির কতটা আপন ছিলেন, হাদিসের আলোকে তার কিছু চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো :
প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী : খাদিজা (রা.) প্রথম নারী, যিনি নবীজির দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, ‘যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি সেদিন [এর আগে খাদিজা (রা.) ও আবু বকর (রা.) ব্যতীত] অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। আমি সাত দিন এমনিভাবে অতিবাহিত করেছি যে আমি ইসলাম গ্রহণে তৃতীয়জন ছিলাম। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭২৭)
নিঃস্বার্থ বন্ধু : খাদিজা (রা.) নবীজি (সা.)-এর শুধু স্ত্রীই ছিলেন না, ছিলেন ভালো বন্ধুও। হেরা গুহায় যখন নবীজি (সা.) ধ্যানে মগ্ন থাকতেন, তখন এই মহীয়সী নারী বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে তাঁর খাবার পৌঁছে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩)
যাদের হেরা গুহা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে, তারা জানে সেখানে পৌঁছা কতটা দুঃসাধ্য ব্যাপার।
সাহসদাতা ও সান্ত্বনাদাতা নারী : রাসুল (সা.) যখন জিবরাইল (আ.)-কে প্রথম দেখে ভয় পেয়েছিলেন এবং খাদিজা (রা.)-কে এসে বলছিলেন, খাদিজা, আমার কী হলো? আমি আমার নিজের ওপর আশঙ্কা করছি। খাদিজা (রা.) বলেন, না, কখনো তা হবে না। বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোঁজখবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথির সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৩)
স্বামীকে সমর্থন : মুসনাদ ইবন হাম্বলের বর্ণনায় দেখা যায়, খাদিজা (রা.)-এর এক প্রতিবেশিনী এক রাতে মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে শুনেছিলেন, হে খাদিজা, আল্লাহর কসম, আমি কখনো লাত আর উজ্জার পূজা করব না, আল্লাহর কসম, কখনোই তাদের অর্চনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন খাদিজা (রা.) বললেন, দূর হোক লাত আর উজ্জা। (মুসনাদে আহমদ : ১৭৪৮৭)